মোরেলগঞ্জ ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শহিদুলের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ! বাগেরহাট / 
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার মোঃ শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে গত ১৪ আগস্ট বেশ কিছু সংখ্যক ভুক্তভোগীর পক্ষে রাখাল চন্দ্র মন্ডল নামে একজন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগীরা এ প্রতিনিধিকে জানান, সার্ভেয়ার মো. শহীদুল ইসলাম বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন খাস জমি সহ এক জনের জমি অন্য জনের নামে নামজারী ও জমা খারিজ করে দিচ্ছে। এতে করে উভয় পক্ষের মাঝে বাড়ছে সংঘর্ষ। মামলা মোকদ্দমা গড়াচ্ছে থানা ও আদালতে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের জিউধরা গ্রামের সত্তন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে রাখাল চন্দ্র মন্ডলের জিউধরা বাজারের ১ শতাংশের একটা দোকানঘর ডিসিআর’র জন্য আবেদন করলে তদন্তপূর্বক সকল কার্য সম্পন্ন করে ৭০ হাজার টাক নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয় কাগজপত্র পর্যালোচনা পূর্বক রাখাল চন্দ্রকে ডিসিআর পর্চা দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তাদের ডেকে ওই পর্চা পেতে হলে আরো ১ লাখ টাকা অফিস খরচ দিতে হবে বলে রাখাল চন্দ্রকে সাফ জানিয়ে দেন সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলাম।
উপায়ান্তর না পেয়ে রাখাল চন্দ্র ৫০ হাজার টাকা অফিস এসে সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলামকে নগদ প্রদান করেন। তাতেও পর্চা না দিয়ে বাকী টাকা দেবার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেন ওই সার্ভেয়ার। এক সপ্তাহ পর অনেক কষ্ট করে আরও ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে মোট ৭০ হাজার টাকা সার্ভেয়ার শহীদুলকে প্রদান করেন। এতেও পর্চা দেননি। আবারো ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন।
উপায় অন্ত না পেয়ে ১০ আগস্ট পুনরায় তার কাছে গেলে তিনি রাখাল চন্দ্রকে অফিস থেকে বের করে দেন এবং তার দেওয়া ৭০ হাজার টাকা ভূমি কর্মকর্তার কাছ থেকে নিতে বলেন। উপায়ান্তর না পেয়ে সাবেক ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মালেকের কাছে যান রাখাল চন্দ্র। ভূমি কর্মকর্তা সার্ভেয়ার শহীদুলকে ডেকে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। সার্ভেয়ার ২৫ আগস্ট টাকা ফেরত দেবেন বলে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন।
রাখাল চন্দ্র আরও জানান, পরবর্তীতে তার পার্শ্ববর্তী পাজাখোলা গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে কমল কৃষ্ণ মন্ডলকে অফিসে ডেকে এনে তাকে বাদী করে আমি সহ ৫ জনের নামে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালেত একটি স্ট্যাম্প জালিয়াতি মামলা করান। চাহিদামত টাকা না পেয়ে সার্ভেয়ার শহীদুল এমন করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী রাখাল চন্দ্র মন্ডল।
এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে বাজিকরখন্ড গ্রামের আনসার হোসেন হাওলাদারের আধা শতাংশ জমির ডিসিআর'র জন্য ৩০ হাজার টাকা, জিউধরা গ্রামের মোঃ শাহজাহান হাওলাদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, একই গ্রামের মাধুরি বেগমের কাছ থেকে ৩০ হাজার, সাইদুর রহমান তালুকদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, কবির হোসেন হাওলাদারের কাছ থেকে ৩৩ হাজার, কামাল তালুকদারের কাছ থেকে ৩৫ হাজার, সাইদুর রহমান তালুকদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, আশ্রাফুল চৌকিদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, জুয়েল মৃধার কাছ থেকে ১৫ হাজার, তালহার নিকট থেকে ৩০ হাজার, মোস্তাফিজুর রহমান মন্টুর কাছ থেকে ৩০ হাজার, আল আমিন হাওলাদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ছাড়াও আরও অনেকের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে উৎকোচ গ্রহণ করছেন।
এ বিষয়ে সার্ভেয়ার মো. শহীদুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক স্যারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ হয়েছে, স্যার আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তার অফিস কক্ষে শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে ডেকেছেন।