Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

শিল্প শহর সৈয়দপুরে অব্যাহত লোডশেডিং : উৎপাদন ব্যাহত, বিপর্যস্ত জনজীবন নীলফামারী

শিল্প শহর সৈয়দপুরে অব্যাহত লোডশেডিং : উৎপাদন ব্যাহত, বিপর্যস্ত জনজীবন

গত এক সপ্তাহ জুড়ে দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না শিল্প শহর সৈয়দপুরে। এতে বিপাকে পড়েছেন এখানকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্প মালিকরা । বিদ্যুৎ না থাকায় এসব শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। সেই সাথে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

সরেজমিন ঘুরে ও এখানকার ক'জন শিল্প উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিসিক শিল্প নগরীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে প্রায় এক হাজার শিল্পকারখানা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হালকা প্রকৌশল কারখানা, রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেটন্টসসহ ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানাগুলোর হালকা প্রকৌশল শিল্পপণ্যসহ উৎপাদিত বহু পণ্য যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এছাড়া এখানকার তৈরি গার্মেন্টসপণ্য রপ্তানি হয় ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে। এসব শিল্প কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশী মানুষ। কিন্তু বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

তথ্য মতে, শহরের শহীদ জহুরুল হক সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, টার্মিনাল, আতিয়ার কলোনী, বাশঁবাড়ী মুন্সিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় দুইশ' রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা, হালকা প্রকৌশল কারখানা, কিছু মাঝারি ও ভারিশিল্পপ্রতিষ্ঠান। দিনের বেশীরভাগ সময় সেগুলোতে নেই কোনো মেশিনের আওয়াজ, নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।  কারখানার উৎপাদন  কার্যত বন্ধ থাকছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

শিল্পকারখানার মালিরা জানান, তাঁদের  এলাকায় দিনের বেলায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। ঠিকমতো কারখানা চালাতে না পারায় কর্মীদের বেতন ও ব্যাংকঋণ পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে।

শহীদ জহুরুল হক সড়কের হালকা প্রকৌশল শিল্প কারখানার মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমার কারখানা খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই ৯ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় বার লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমার মূল্যবান একটি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই কারখানা আপাতত বন্ধ রেখেছি।

ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা এম আর ইন্টারন্যাশনালের সত্তাধিকারি ও সৈয়দপুর রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান দুলু জানান, ভারতে তার তিন লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানির চুক্তি রয়েছে। কিন্তু ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে কারখানায় ঠিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে না । এতে করে সময়মত পোশাক ডেলিভেরি করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকরা বসে থাকলেও তাঁদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে।

বাংলেদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পু জানান, সৈয়দপুর ৩০০ টি হালকা প্রকৌশল শিল্প কারখানা রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা সারা দেশব্যাপী। তবে চলমান লোডশেডিংয়ে  আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি । কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।

সৈয়দপুরে অব্যহত লোড শেডিং সম্পর্কে নর্দান ইলেক্টিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সৈয়দপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, সৈয়দপুরে ৪৮ হাজার বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকের  ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে মিলছে মাত্র ১২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সেনানিবাস, বিমানবন্দর ও রেলওয়ে কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে প্রয়োজন হয় ৩ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার চেয়ে জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্ট হয়েছে।