Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি! নীলফামারী

সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি!

নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের একমাত্র রেলওয়ে সেতু কারখানায় আট বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে ইয়ার্ডজুড়ে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে কারখানার মূল্যবান  মেশিনপত্র ও লোহার বিভিন্ন মালামাল। ইতোমধ্যে ব্যবহার আর যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে কারখানার অনেক মূল্যবান মেশিনপত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৬৫ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটি গড়ে তোলা হয়। ১৮ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা রেলওয়ে সেতু কারখানায় রয়েছে মেশিন শপ, পয়েন্টস্ধসঢ়; এন্ড ক্রসিং শপ এবং গার্ডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানা। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনের প্লাটফর্ম শেডের মালামাল, রেলওয়ে লাইনের পয়েন্ট এন্ড ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলি ও মোটর ট্রলি মেরামত ও তৈরি, পানির ট্যাংক, ফুটওভার ব্রিজের মালামাল ও ট্যাং স্টেজিংসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি হতো কারখানাটিতে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্বাবধানে পরিচালিত সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থাপনায় এ সেতু কারখানায় প্রতিষ্ঠা পর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক- কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। আর এই ধারাবাহিতকায় ১৯৯২ সালে বাধ্যতামূলক গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ঘোষণা দেয় সরকার। সে সময় ওই সুবিধা নিয়ে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অবসরে যান। পরবর্তীতে নিয়মিত অবসরের কারণে কারখানাটিতে মঞ্জুরিকৃত ১২৭ জন পদের বিপরীতে এখন শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- স্টোরকিপার মনজুর রহমান, রিভিট ওয়ার্কমার করিমুল ইসলাম ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী মিলন মাহমুদ। ফলে ২০১৫ সাল থেকে কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়া সেতু কারখানাটির নিরাপত্তায় রয়েছেন রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনী (আরএনবি) এবং আনসার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। তারা পালাক্রমে কারখানাটিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কারখানার গোটা এলাকাজুড়ে ঝোঁপ জঙ্গল ও বড় বড় আগাছায় পরিপূর্ণ। আবর্জনার স্তপ। খোলা আকাশের নিচে অযত্নে অবহেলায় মাটিতে পড়ে রয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল রড, স্কয়ার রড, কভার প্লেট, মিটার ও ব্রডগেজ লাইনের সেতুর স্পেয়ার গার্ডার। আরও রয়েছে তিস্তা ও পাকশীর হার্ডিঞ্জ সেতুর পরিত্যক্ত লোহা-লক্কর, রেললাইন, একটি বিকল স্টিম ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের লোহার মালামাল। মাটির নিচে চাপা পড়েছে ফ্রাঞ্চ প্লেট ও কভার প্লেট। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এবং দেখভালের অভাবে এসব লোহার মালামাল মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে খোয়াও যাচ্ছে কিছু কিছু মালামাল। সেতু কারখানায় অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকা এসব যন্ত্রাংশ ও মেশিনপত্র ও মালামালের বতর্মান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানা যায়।

রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সৈয়দপুর কারখানা শাখার সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রমিক নেতা মোখছেদুল মোমিন জানান, রেলওয়ে সেতু কারখানাটি বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র ও মালামাল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ কারখানাটির সামান্য আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নিয়োগ দিলে এটি পুনরায় সচল করা সম্ভব হবে। তিনি অবিলম্বে সৈয়দপুরে রেলওয়ে সেতু কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবি জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, সরকার রেলওয়ে উন্নয়নে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই রেলপথের বিভিন্ন স্থানে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সৈয়দপুরের সেতু কারখানাটির প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কারখানাটি সচল করার উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।