ভালো নেই ৩০ টি জাতীয় ও ১০ টি আর্ন্তজাতিক পুরুষ্কার প্রাপ্ত গুনী শিল্পি কাঙ্গালিনি সুফিয়া বিনোদন / 
“কত কষ্ট কইরা আমি-কামাই রোজগার কইরা আনি”সহ এমন বহু কিংবদন্তি গানের গীতিকার এবং শিল্পি কাঙ্গালিনী সুফিয়া এতদিন লড়াই করেছেন দারিদ্রতার সাথে এবার অসুস্থ্যতা পেয়ে বসেছে তাকে। সরকারীভাবে ২০১৫ সালে রাজবাড়ীর আলীপুরে দুই রুম বিশিষ্ট একটি ঘর ও ২০ শতাংশ জমি পেয়েছেন তিনি। সেই ঘরের এখন বেহাল দশা। শেষ ইচ্ছা নীজের জমির উপর সুফিয়া একাডেমী তৈরি করার, যেখান থেকে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পি। আর জেলা কালচারাল অফিসার বলছেন, গুনী এই শিল্পি ৩০ টি জাতীয় ও ১০ টি আর্ন্তজাতিক পুরুষ্কার পেয়েছেন। তার অসুস্থ্যতায় পাশে থাকবে সবাই।
জানাগেছে, কাঙ্গালিনী সুফিয়ার জন্মগত নাম, টুনি হালদার। ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া এলাকায় জন্মগ্রহন করেন তিনি। তার বাবার নাম খোকন হালদার ও মায়ের নাম টুলু হালদার। তিনি লালন গীতি, লোকসঙ্গীত, বাউল গান করেন। একতারা হাতে ১৯৭৫ সাল থেকে গান গেয়ে আসছেন। তিনি কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই, পরাণের বান্ধব রে বুড়ি হইলাম তোর কারণে, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া প্রভৃতি গানের জন্য তিনি বিখ্যাত।
গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে তিনি তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুধির হালদার নামের একজন বাউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যদিও সে বিয়ে বেশি দিন টিকেনি। ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৮ সালে। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তার গুরু দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত। তার প্রিয় শিল্পী লালন ফকির, আব্দুল আলীম। সুফিয়ার মোট রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তিনি রাজ সিংহাসন চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ্য পথ চলায় এখন বড় ক্লান্ত কাঙ্গালিনি সুফিয়া। তিনি জানান বর্তমানে প্রেসার, কিডনি,স্টোক, প্রসাবে ইনফেকশন ও মাথা ঘোরানো রোগে আক্রান্ত তিনি। সাত বছর আগে ২০১৫ সালে সরকারীভাবে যে ঘরটি পেয়েছিলেন তাও এখন জরাজীর্ন প্রয়োজন হয়েছে মেরামতের। তাছাড়া সরকারীভাবে পাওয়া ২০ শতাংশ জমির উপর সুফিয়া একাডেমী করার শেষ ইচ্ছা তার। তিনি মনে করেন এখানে একটি একাডেমী তৈরি হলে তার মেধা ও শ্রম দিয়ে তৈরি করবেন নতুন নতুন শিল্পি।
রাজবাড়ীর বেলগাছি আরশি নগর লালন স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম আক্কাছ বলেন, রাজবাড়ীতে শিল্পি তৈরি হওয়ার মতো কোন প্রতিষ্ঠান নেই। যেগুলো তৈরি হয় তা ব্যক্তি উদ্যোগে, সহযোগিতা ও ষড়যন্ত্রের কারনে সেগুলোও ধ্বংস হয়ে যায়। রাজবাড়ীতে কাঙ্গালিনি সুফিয়ার নামে একটি একাডেমী তৈরি হলে নতুন নতুন শিল্পি তৈরি হবে। এলাকারও সুনাম বৃদ্ধি পাবে।
রাজবাড়ী জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতীম দাস বলেন, গুনী এই শিল্পি ৩০ টি জাতীয় ও ১০ টি আর্ন্তজাতিক পুরুষ্কার পেয়েছেন। তিনি সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ভাতা পান। তার অসুস্থ্যতায় জেলা প্রশাসকসহ সকলেই এগিয়ে আসবেন।
গানের পাশাপাশি কাঙ্গালিনি সুফিয়া দেয়াল ও নোনাজল নাটক এবং ১৯৯৭ সালে বুকের ভিতর আগুন নামে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।