জগন্নাথপুরে যৌতুকের বলি চম্পা রানী দাস! সুনামগঞ্জ / 
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় যৌতুকলোভী সহকারী শিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকার কর্তৃক যৌতুক বাবত ১০ লাখ টাকার জন্য একাধিকবার চাপ প্রয়োগ এবং শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে স্ত্রী চম্পা রানী দাসকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন বলে অভিযোগ চম্পার স্বজনদের।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে তার স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার খালি বাসায় ঘরে স্ত্রী চম্পাকে আটকে রেখে বাহিরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে কর্মস্থল স্কুলে চলে যান এবং বিকেল ৩টায় বাসায় এসে দরজা খুলে দেখতে পান চম্পা রানী দাস শিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন। মৃদুল এ ঘটনাটি চম্পার ভাইদের জানানোর পরপরই তারা ছুটে যান চম্পার ভাড়া বাসায় । পরে জগন্নাথপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চম্পার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন। পরে চম্পার লাশটি রাতে জগন্নাথপুর হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয় এবং রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে আনা হয়।
এ ঘটনায় চম্পার আপন ছোটভাই নিহার চন্দ্র দাস বাদি হয়ে রবিরার (১৭ এপ্রিল) চম্পার স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে চম্পার ভাসুর ইসহাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সরকার ও তার শ্বাশুড়ি প্রেমলতাকে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার দন্ডবিধির ৩০৬/৩৪ ধারায় মামলা নং -০৭। তারিখ ১৭/০৪/২০২২ ইং।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের আঙ্গারুয়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র দাসের মাস্টার্স পড়–য়া একমাত্র মেয়ে চম্পা রানী দাস (২৫) এর সাথে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের যামিনী সরকারের ছেলে সহকারী শিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরপরই মৃদুল চন্দ্র সরকার তার কর্মস্থল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের পাঠকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তার স্ত্রী চম্পা রানী দাসকে নিয়ে পাশের দাউরাই গ্রামে লন্ডন প্রবাসী দুদু মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিয়ের পরপরই স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে বাসার জায়গা কিনবেন বলে চম্পাকে তার পিতার বাড়ি হতে যৌতুক বাবত ১০ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এই টাকার জন্য প্রায়ই স্ত্রী চম্পা রানীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো এবং শিক্ষক স্বামী মৃদুল সকালে তার কর্মস্থল স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন বাসার ভেতরে স্ত্রী চম্পাকে আটকে রেখে বাহিরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে যেতেন এবং স্কুল থেকে বিকেলে আসার পর দরজার তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করতেন। বিয়ের কয়েকদিন পরই যৌতুকের টাকার জন্য স্বামীর নির্যাতনের কথা চম্পা তার আপন ছোটভাই মামলার বাদি নিহার রঞ্জন দাসকে জানালে নিহার বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর সিলেট সোনালী ব্যাংক শাখার মাধ্যমে চম্পার স্বামী মৃদুল সরকারকে একলাখ পাচঁ হাজার টাকা প্রদান করেন। কিছুদিন মৃদুল-চম্পার সংসার জীবন ভালভাবে চললেও আবারো বাকি যৌতুকের টাকা চম্পার বাবার বাড়ি হতে এনে দিতে মৃদুল চন্দ্র সরকার,তার আপন বড়ভাই প্রধান শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সরকার ও শ্বাশুড়ি প্রেমলতা মিলে চম্পার উপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতনের স্টীম রোলার। এই নির্যাতনের কারণে চম্পার জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে । তাকে প্রতিদিন বাসার ভেতরে একা আটকে রেখে দরজা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে রাখা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি নিহত চম্পার ছোটভাই নিহার চন্দ্র দাস জানান, তার ভগ্নিপতি মৃদুল চন্দ্র সরকার ও তার বড়ভাই এবং মা মিলে যৌতুকের টাকার জন্য সবসময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। তিনি দাবী করেন আমার বোন মাস্টার্স পড়ুয়া সুস্থ এবং স্বাভাবিক ছিল সে কোনদিন আত্মহতা করতে পারে না। মৃদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে ঘরের শিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে হত্যা করেছে বলে রটিয়েছে। তিনি বিষয়টি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ঘাতক যৌতুকলোভী মৃদুল চন্দ্র সরকারসহ সকল আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈকত দাস জানান, চম্পার লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে এবং রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।