Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

হার না মানা এক প্রতিবন্ধি যোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র দে নেত্রকোনা

হার না মানা এক প্রতিবন্ধি যোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র দে

সব মানুষ এক রকম ভাগ্য নিয়ে জন্মায়না। কেউ দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েও নিজের একান্ত চেষ্টায় নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে। ইচ্ছা আর প্রচেষ্টা থাকলে যে কেউ সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে। আবার কেউ জন্মথেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মনিলেও জীবন সংগ্রাম করে কারো কাছে হাত না পেতে সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ আনতে কাজ করছেন নীরব যোদ্ধা হিসেবে। এমই একজন দুর্গাপুর পৌরসভার সাধুপাড়া এলাকার নারায়ন চন্দ্র দে (৭০)।  তার ডাক নাম নারু। সবাই তাকে নারু দা বলেও ডাকেন। সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ভাগ্যের চাঁকা ঘোরাতে এখনও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।

সংসার জীবনের সন্মুখযোদ্ধা নারু দা বৃহস্পতিবার দুপুরে মাঠের ঘাস কাটতে কাটতে এ প্রতিনিধি কে জানান, দুই ভাই এর মধ্যে নারায়ন বড়। তার ছোট ভাইয়ের নাম হারাধন। বাবা ছিলেন একজন সামান্য কৃষক। বেশি জমিজমা না থাকায় ছেলেদের বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি তার বাবা মনিন্দ্র চন্দ্র দে। নারু ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিলনা বিধায় তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর আগেই ছোটখাটো ব্যবসায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো হারাধন কে। কিন্তু নারু দা ছিল একটু ব্যতিক্রম। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় অত্যন্ত আগ্রহ ছিল তার। তাই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় তাকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারনে আর এগুতে পারেননি তিনি।

শারীরিক প্রতিবন্ধি হিসেবে জন্মনেয়ার পর নানা সময়ে চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পেরে বাবা ও মা কে হারান নারু। ছোট ভাইয়ের সংসারে বোঝা না হয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কারো কাছে হাত না পেতে প্রতিদিন নিজেদের গরুর জন্য গো-খাদ্য কাটেন এবং অতিরিক্ত গুলো বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগান দেয়া শুরু করেন। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় বেশি চালান না থাকায় ওই ব্যবসা আর বেশিদুর এগুতে পারেনি। নিজে প্রতিবন্ধি হয়ে সংসার করতে না পারলেও ছোট ভাইকে বিয়ে করিছেন নারু। ওই সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে বড় অসুস্থ্যতায় ছোটভাই হারাধন মৃত্যুবরণ করায় সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। পরবর্তিতে কোন রকমে সংসার চলতে থাকলেও মাথা গোজার তেমন কোন ঘর না থাকায় বর্ষা ও শীতে খুব কস্টে থাকতে হয় তাদের। সরকারি ভাবে প্রতিবন্ধি ভাতা পেলেও তা যৎ সামান্য। এর পর থেকেই সবুজ ঘাস কাটা ও বিক্রি তার সঙ্গী হয়ে দেখা দেয়। যেদিন ঘাস টাকা আছে সে দিন খাওয়া আছে, যেদিন নাই, সেদিন খাওয়া জোটে না তাঁদের। এভাবে আর কতো ?

তার জীবনে ইচ্ছা কি ? এনিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বয়স হয়েছে, লাঠি ভর দিয়ে কাঁধে গো-খাদ্যের বস্তা নিয়ে এদিক ওদিক যাওয়া এই যন্ত্রনা যেন আর সয়না তার জীবনে। বাড়ীর সামনে ছোট-খাটো একটা মোদি দোকান দিতে পারলে হয়তো এই কস্ট লাঘোব হতো। কিন্তু এর জন্য যে টাকার প্রয়োজন সে সামর্থ্য তার নেই। সেই সাথে সরকারি ভাবে অসহায়দের ঘর দেয়া হলেও তার ভাগ্যে জোটছেনা একটি ঘর। শীত ও বর্ষায় আমাদের যে কি কস্ট কয় তা বলে বোঝাতে পারবোনা। উপজেলা বা পৌর প্রশাসনের যদি একটু দয়া হয় তাহলে, মরার আগে হলেও একটা ভালো ঘরে ঘুমাতে পারতাম এই আশা ছাড়া আর কিছুই চাই না।

এ নিয়ে পৌর মেয়র আলা উদ্দিন আলাল এ প্রতিনিধি কে বলেন, নারায়ন দের বিষয়টি আমার জানাছিলো না। পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবন্ধিগন যাতে বসে থেকে যাতে ছোট খাটো ব্যবসা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সে লক্ষ্যে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নারু দার জন্য কিছু একটা করতে পারবো।