Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

খাগড়াছড়ির কারাগারে আসামীর মৃত্যুতে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির কারাগারে আসামীর মৃত্যুতে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার কারাগারে আসামী মিলন বিকাশ ত্রিপুরার মৃত্যুতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা কারাগারে ভিতরে মিলন বিকাশ ত্রিপুরা(২৬) নামে একজন আসামী মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এমন মৃত্যু ঘটনা রহস্যজনক বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার তরফ থেকে। এ ব্যাপারে জেল কারাগারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২৮ মে ২০২১) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে এমন রহস্য ঘটনা ঘটে। শনিবার বিকেলে আড়াইটার দিকে নগদ ১০হাজার টাকা দিয়ে মরদেহ সনাক্ত করার পর পরিবারের নিকট স্থানান্তর করা হয়।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে কর্মরত সহকারি প্রধান কারারক্ষী (০২১৭৮০) ছবি রঞ্জন ত্রিপুরাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময়ে আমি ছিলাম না। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। 

খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এই ঘটনায় জেল সুপার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। 

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ আরো জনান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সময় জানান, মাথায় আঘাত ও গলায় গামচা পেচানোর দাগও দেখা যায়।

খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা: রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি জেলা কারাগার থেকে এক কয়েদিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই ওই কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। 

মরদেহ তদন্তকারী সহকারি কমিশনার শ্যামানন্দ কুন্ডকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গলায় কালো রঙ্গের দাগ ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তিনি আর কোন বক্তব্য দিতে চাইনি।

খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেল সুপার (অতি. দা) ও সহকারি কমিশনার মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, শুক্রবার (২৮ মে ২০২১) ভোর পৌনে ছয়টায় কারাগারের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ল্যাট্রিন এর ভেনটিলেটার রডের সাথে গলায় গামছা পেছিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষী ও কারারক্ষী তাকে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালের সহকারি সার্জনের পরামর্শ মোতাবেক তাৎক্ষণিকভাবে আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা পূর্বক ভোর পৌনে ছয়টায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেল সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিবার্হী মেজিস্ট্রেট মো: সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, শুক্রবার ভোরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কারাগারে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের করা হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার মো: দিদারুল আলম জানান, আসামি মিলন সকালে কারাগারের আইসোলেশন সেন্টারের টয়লেটে যান। কিন্তু দীর্ঘসময় পরেও টয়লেট থেকে বের না হওয়ায় অন্য আসামিরা সেখানে গিয়ে টয়লেটের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে মিলনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি আধুসিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে মিলন বিকাশ ত্রিপুরা (২৬) নামে পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরটি কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি দুটিকে তিন ও পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি কারাগারের জেল সুপার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সাজ্জাদ হোসেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সাঈদকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) জিনিয়া চাকমা ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মিটন চাকমা। কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

অপরদিকে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটির জেলা কারাগারের জেল সুপার মতিউর রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন, বান্দরবান কারাগারের জেলা সুপার ফোরকান ওয়াহিদ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ডা: শামিম রেজা। এ কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।