Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ভাল্লুকের কান ধরে গৃহবধূর জীবন রক্ষা অন্যান্য

ভাল্লুকের কান ধরে গৃহবধূর জীবন রক্ষা

কান টানলে মাথা আসে কিন্তু কান টানায় প্রাণও বাঁচে! এমনটা আজব কথা কি শুনেছেন? ঘটনা ভারতের পুরুলিয়ার কোটশিলার এক গৃহবধূ জঙ্গলে ভাল্লুকের সামনে পড়ে যান। কিন্তু গৃহকধূ ঘাবড়ে না গিয়ে কষে ভাল্লুকটির কান শক্তভাবে মলে দিয়েছেন। তাতে অবশ্য ভাল্লুকটির থাবা খেতে হয়েছে তাকে। তবে প্রাণ বেঁচেছে। বাঁ ঊরুতে ক্ষত নিয়ে ৪৪ বছর বয়সী ওই গৃহবধূ এখন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নাম তার বিন্দুদেবী। বাড়ি কোটশিলার কাঁড়িয়র গ্রামে। স্বামী-স্ত্রী মুড়া প্রান্তিক চাষী। তাদের পাঁচ মেয়ে, এক ছেলে। স্বামীর সঙ্গে শনিবার জঙ্গলে পাশে ধানি জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন বিন্দু। জমির কাজ শেষে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে স্বামী-স্ত্রী জঙ্গলে ঢোকেন। হামলা হয় তখনই। একটি ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে ছিল ভাল্লুক। আচমকা তেড়ে আসে বিন্দুর দিকে। 

বিন্দুদেবী জানান, ভাল্লুকটা ডান পায়ে থাবা মারতে যায়। পা সরিয়ে নিই। আমি বরের কাছে শুনেছিলাম, কান চেপে ধরলে নাকি ভাল্লুক কিছুটা দমে যায়। সেটাই প্রাণে বাঁচার সুযোগ। গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে তাই ওর কান চেপে ধরেছিলাম।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিন্দুদেবীর বড় জা কমলা মুড়াও জঙ্গলে ভাল্লুকের মুখোমুখি পড়েছিলেন। তার দাবি, ‘কান মলা’র কৌশল নিয়েই প্রাণে বেঁচেছিলেন। কমলাদেবী গায়ের জোরে ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি ভাল্লুককে। কান ছাড়িয়ে সে নখের আঁচড় মারে, কামড়ে দেয় বধূটিকে। ভাগ্য ভালো থাকায় প্রাণে বাঁচেন কমলাদেবী। ছোট জা বিন্দুকে সে গল্প অনেকবার শুনিয়েছেন তিনি।

বিন্দুর প্রাণ বাঁচানোর ভূমিকা আছে তার স্বামীরও। স্ত্রীকে ভাল্লুকের সঙ্গে লড়তে দেখে এক মুহূর্ত দেরি না করে হাতের সামনে পড়ে থাকা বড় পাথরের টুকরো তুলে তিনি ছুড়ে দেন ভাল্লুকের দিকে। ততক্ষণে বিন্দুর শরীরের বাঁ দিকে থাবা বসিয়েছে ভাল্লুক। তবে পাথর গায়ে লাগতেই তড়বড়িয়ে জঙ্গলের গভীরে গা ঢাকা দেয় ভাল্লুকটি। বধূ বলেন, ‘কাঠ জোগাড় করতে গিয়ে খসে পড়া ডাল খুঁজছিলাম বলে কুড়াল হাতে রাখিনি। সঙ্গের কুড়াল রাখা ছিল দূরে গাছের গোড়ায়। কুড়াল থাকলে সেটা নিয়েই ভিড়ে যেতাম।’

বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলে সাধারণত ‘এশিয়াটিক ব্ল্যাক বেয়ার’ দেখা যায়। কোটশিলা ও ঝালদার জঙ্গলে কিছু ‘স্লথ বেয়ার’ও রয়েছে। অনেক সময় বিনা প্ররোচনায় মানুষের উপরে হামলা করে ভাল্লুক। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড পাশে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভাল্লুকের উৎপাত একেবারেই নতুন নয়। 

গত বছর পাঁচেকে দক্ষিণবঙ্গে অন্তত ১১-১২টি ভাল্লুকের হামলার ঘটনা জানা রয়েছে বন দফতরের। তেমন একটি হামলায় পুরুলিয়াতেই চোখ নষ্ট হয়েছে এক বনকর্মীর। ভাল্লুকের হামলার খবর শোনা যায় উত্তরবঙ্গেও।

ঘটনা জেনে বিন্দুদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করায় বন দফতর। চিকিৎসার খরচও বহন করছেন তারা। ডিএফও (পুরুলিয়া) কুমার বিমল বলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাল্লুকের সঙ্গে লড়ে দারুণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বিন্দুদেবী।’

লড়াইটা মনে পড়লেই এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। বিন্দু বলছেন, ভাগ্যিস, হাতের নাগালে ওর কান দুটো পেয়ে গিয়েছিলাম।