Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

শিক্ষকরা দক্ষতার সহিত পাঠদানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না সাক্ষাৎকার

শিক্ষকরা দক্ষতার সহিত পাঠদানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে যাকে আমরা জানি সেই ড. মাহাথির মোহাম্মদ যখন রাষ্ট্রটির শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করেছিলেন। শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একদল দক্ষ ও দেশপ্রেমী নাগরিক। যাদের নিয়ে ৮০’এর দশকে মাহাথির মোহাম্মদ পিছিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে তুলে দিয়েছেলেন উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন পাওয়ার হিসেবে।

এজন্য শুধু মালয়েশিয়ানরা নয় বরং গোটা বিশ্ব মাহাথির মোহাম্মদকে সম্মানের সাথে অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে স্মরণ করে। মাহাথির মোহাম্মদ এটা পেরেছিলেন কেবল সে দেশের শিক্ষার্থীদেরকে সততার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার অনুসরণে অভ্যস্থকরণের মাধ্যমে। মাছারাঙা টেলিভিশনের কল্যানে কিছু শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার শুনে (বিশেষত যাদের ৬ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত) কল্পনার রংয়ে আঁকতে চেয়েছিলাম আমার প্রিয় রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভবিষ্যত। অনেক চেষ্টা করেও সেখানে ধূসর অন্ধকার ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করতে পারিনি। পাসের হারের সনদ প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়াতে শিক্ষার মান চাপা দিয়ে রাষ্ট্র যে পথে হাঁটছে তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফলে গ্রেট পয়েন্ট এভারেজ সিস্টেম চালু হওয়ার বছর(২০০১) সালে সারা দেশে জিপিএ প্রাপ্তদের সংখ্যা ৭৬ হলে মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালের সংখ্যাটা ১ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। অবশ্য ২০১৫ সালের সংখ্যাটা আরও বেশি ছিল। সেকেন্ডারী পাস করা একজন শিক্ষার্থী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নাম জানে না, এটা গর্বেরই বটে ! সবাই সবকিছু জানবে এটা দাবী করছি না কিন্তু এমন প্রশ্নের উত্তর এ রাষ্ট্রের কোন শিক্ষিত নাগরিক না জানলে সেখানে অবাক হওয়ার বহু কারণ থাকে। ১৩-১৪ বছর শিক্ষালয়ে কাটিয়ে জাতীয় সংগীত এবং রণসংগীতের রচয়িতাদের নাম যাদেরকে শেখানো যায়নি তারা রাষ্ট্রের কতটুকু উপকারে আসবে তা নির্ধারণের দায় রাষ্ট্রের হাতেই ন্যস্ত থাকুক !
মাছারাঙা টেলিভিশনে যে সকল শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারা সকল জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের প্রতিনিধি, এ কথা বলা চলে না। তবে যাদের মুখে আমরা বিভিন্ন বিষয়ের উত্তর শুনেছি(!), তারা যদি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয় তবে দেশের শিক্ষার মান যে অধোঃপতনের সর্বনিম্নগতি অতিক্রান্ত করছে, তাতে সন্দেহের লেশমাত্র নাই। কেননা বর্তমান সময়ে শিক্ষাব্যবস্থায় যে পরিমান দুর্নীতি ও অনিয়ম চলছে তা অন্তত জাতি গঠনের কার্যক্রমের সাথে কোনভাবেই সামন্তরালভাবে চলে না।

বর্তমানে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান পদ্ধতিতে ত্রুটি, পরীক্ষার্থীর নকলসহ নানা ধরণের দুর্নীতিমূলক পন্থা অবলম্বনের অবারিত সুযোগ, পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁস, খাতা মুল্যায়নে ত্রুটিসহ শিক্ষাব্যবস্থায় যে সকল দুর্নীতি চলছে তা বোধহয় সর্বশেষ চলেছিল যুদ্ধের বছর। পাসের হার কমলে বোর্ড প্রধান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য হুমকি থাকায় তারা পাসের হার বাড়িয়ে দিচ্ছেন তুমুলভাবে। ২০০১ সালে যেখানে পাসের হার ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ সেখানে ২০১৬ সালে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৮৮ শতাংশ।

প্রাসঙ্গিকভাবে মন জানতে চাচ্ছে, দেশের শিক্ষার্থীদের মননে এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এমন কি অলৌকিকতা ঘটল, যেকারনে হুট করে শিক্ষার্থীরা এমন আকাশচুম্বী সাফল্যের চেরাগ লাভ করলো ? বছরের শুরু কিংবা শেষে শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন পদ্ধতির পর্যবেক্ষণ চালু করায় শিক্ষার্থীরা যতটা বিপাকে পড়ছে তার চেয়ে বেশি বিব্রত হচ্ছে শিক্ষকরা। তারা দক্ষতার সহিত পাঠদানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না।
একটি রাষ্ট্রকে উন্নতকরণের জন্য অন্তত শিক্ষাক্ষেত্রকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা আবশ্যক। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে সীমাহীন দুর্নীতি। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ বোধহয় অদ্বিতীয় রাষ্ট্র যে দেশে বার বার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে একান্ড যে ঘটেনি তা নয় কিন্তু তারা প্রথমবারের পরেই তা রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ চলছে ক্রমশ উল্টোপথে। শুধু শিক্ষার্থীদের কাছে নয় বরং বিভিন্ন চাকরীর পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এটা আমাদের মননের প্রতিবন্ধিত্ব বরণের উপসর্গ মাত্র।
স্যাটেলাইট টেলিভিশনের প্রতিবেদনটি যদি কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙাতে সক্ষম না হয় তবে সেটা এ জাতির জন্য দ্বিতীয়বার আত্মহত্যা ত্ল্যু হবে। রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য অন্তত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ত্রুটির উর্ধ্বে রাখুন। এ রাষ্ট্রের জন্যও একজন মাহাথির মোহাম্মদের মতো একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিকের উত্থান আবশ্যক যিনি আগামীর স্বপ্ন নিয়ে অন্তত একঝাঁক দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।

কেউ কি আছে তেমন ? ধ্বংসের কবল থেকে শিক্ষাখাত এবং আগামী প্রজন্মকে রক্ষায় যদি কেউ এগিয়ে না আসে, তবে এ জাতি স্বাধীনতা দিবসের প্রশ্নের উত্তরে ১৬ ডিসেম্বর এবং বিজয় দিবস ২৬ ডিসেম্বর শুনেও অবাক হওয়ার অনুভূতি হারাবে ! এভারেস্টকে ইংল্যান্ডে এবং নেপালের রাজধানী নেপচুনে প্রতিষ্ঠা করা লাগতে পারে !
রাজু আহমেদ। কলামিষ্ট।