চোরের স্বর্গরাজ্যে পরিণত সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নীলফামারী / 
নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি বর্তমানে চোরের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নগদ টাকা-পয়সা, দামী মোবাইল ফোন সেট ও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি যাচ্ছে।
সম্প্রতি এসব চুরি বন্ধে হাসপাতালে ২৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না হাসপাতালের চুরির ঘটনা। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের প্রায় ২০টি মোবাইল ফোন ও নগদ অর্ধ লক্ষাধিক টাকা চুরি গেছে। এতে করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সূত্রমতে, সৈয়দপুর শহরের পশ্চিমে কুন্দল এলাকায় ১৯৬২ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপিত হয়েছে। বিগত ২০১১ সালে ৫০ শয্যা থেকে এ হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। মূলতঃ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে সৈয়দপুর উপজেলার মানুষ ছাড়াও আশেপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এসবের মধ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর ও খানসামা, রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ এবং নীলফামারীর সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার এলাকার একাংশের মানুষজন চিকিৎসা সেবা নিতে আসে এখানে। এছাড়াও রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে দূর্ঘটনার শিকার লোকজনকেও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এসব নানাবিধ কারণে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়। এছাড়াও হাসপাতালের আউটডোরে (বর্হিবিভাগ) শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন প্রতিদিন। তাই বিভিন্ন বয়সী কয়েক শত মানুষের সমাগম ঘটে হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত। আগে মাঝে মধ্যে হাসপাতালটিতে ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে চুরির ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের প্রায় ২০টি মোবাইল ফোন ও নগদ অর্ধ লক্ষাধিক টাকা চুরি গেছে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, হাসপাতালে চুরির ঘটনাগুলো ঘটে মূলতঃ ভোর ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে। হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী ও স্বজনেরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন, ঠিক সেই সময়ে চোরেরা কৌশলে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। এরপর রোগী ও তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোন সেট, নগদ টাকা-পয়সা ও মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সটকে পড়েন।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে শহরের চামড়াগুদাম এলাকার জনৈক রফিকুল ইসলাম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন। রাতে চোরেরা তাঁর মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা চুরি যায়। এর আগে সৈয়দপুর পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা উন্সিলরের দুটি মোবাইল ফোন সেট চুরির ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে এক তত্ত্বাবধায়কের ব্যবহৃত মূল্যবান মোবাইল ফোন চুরি যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এর আগে হাসপাতালে বৈদ্যূতিক সংযোগের সার্ভিস তার চুরির একাধিক ঘটনা ঘটে। চুরি যায় হাসপাতাল চত্বরে থাকা মসজিদের পানি তোলার মটার। আর দিনের বেলা হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের মোটরসাইকেল,বাইসাইকেল রিকশা ও রিকশাভ্যান চুরির ঘটনা ঘটেছে অসংখ্যক বার।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. নাজমুল হুদা জানান, রাতের বেলা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো থেকে রোগী ও স্বজনদের দামী মোবাইল ফোন সেট ও নগদ টাকা পয়সা চুরির ঘটনার অভিযোগ মিলছে অহরহ।
বিষয়টি সৈয়দপুর থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। চুরিরোধে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌখিক ভাবে বিষয়টি অবগত করছেন। সে লক্ষ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে
চোরকে সনাক্তের চেষ্টা চলছে।