Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

একযুগ ধরে শিকল বন্দি শ্রীপুরের কায়সার হামিদ গাজীপুর

একযুগ ধরে শিকল বন্দি শ্রীপুরের কায়সার হামিদ

বাবা-মা আদরের সন্তানের নাম রেখেছিলেন দেশ সেরা ফুটবলার কায়সার হামিদের নামে। স্বপ্ন ছিলো নামের সাথে সুবিচার করে সন্তানও একদিন দেশ সেরা হবে। কিন্তু বিধির বিধান না যায় খন্ডন। আড়াই বছর বয়সেই বাবা-মা জেনে যান তাদের সন্তানের আচরন স্বাভাবিক নয়। তারপর থেকে ১২ বছর যাবৎ শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে ১৮ বছরের কায়সার হামিদ।অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন উন্নত চিকিৎসা করলে সুস্থ হতে পারে কায়সার।

বলছিলাম, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রামের মো. লুৎফুল্লাহ খানের ছেলে কায়সার হামিদের কথা। জন্মের আড়াই বছর পর থেকে অন্য শিশুদের থেকে ব্যতিক্রম আচরণ দেখে বাবা-মা বুঝতে পারেন তাদের সন্তান প্রতিবন্ধী।বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেজাজ হয়ে উঠে খিট খিটে। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশী শিশুদের মারধর শুরু করে কায়সার। আশপাশের বাড়ির গাছ পালা কেটে ফেলাসহ নানা ধরনের উৎপাত করতে থাকে সে। ৬/৭ বছর বয়সে আয়ত্বের বাইরে চলে যায় সে। এরপর থেকেই তার বন্দি জীবন শুরু।কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সাত বছর বয়স থেকে প্রথমে রশি দিয়ে এবং পরে পায়ে শিকল পড়ানো হয় তার। শীত কিংবা গরম কোনো ঋতুতেই গায়ে কাপড় রাখতে চায়না সে।এভাবইে ১২ বছর ধরে চলছে শিকল বন্দি জীবন যাপন।

কখনো বাড়ির পাশের ঘাসের মাঠে আবার কখনো এক চিলতে টিনের চালের ঘরে উলঙ্গ হয়ে বসে থাকে। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই টগবগে যুবকটির। বাইরে তখন খেলছে শিশু-কিশোররা। অন্য সবাই কাজে ব্যস্ত।

এখন কায়সার হামিদের বয়স ১৮ বছর।নৈশ প্রহরীর কাজ করে দুই পুত্র ও তিন কন্যাসহ সাত সদস্যের পরিবারে সমস্ত ব্যয় বহন করে প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেনা তার বাবা লুৎফুল্লাহ খান। তিনি বলেন, কোন কুল কিনার পাচ্ছিনা কী করবো। কষ্টে-শিষ্টে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি, কিন্তু কোন উন্নতি হচ্ছেনা।

আর প্রতিবেশীরা বলছেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগীতা পেলে ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হতে পারে কায়সার হামিদ।

সংশ্লিষ্ট শ্রীপুর পৌর সভার মেয়র আনিসুর রহমান ও একই সুরে বললেন ” কোন ডাক্তার ও সমাজের বিত্তশালী কোনো ব্যক্তি ছেলেটির উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করলেই শুধু তার চিকিৎসা সম্ভব।

অসুস্থ কায়সার হামিদের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে।তারপরও সরকারি তরফ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোঃ মন্জুরুল ইসলাম।

শিকল বন্দী কায়সার হামিদ উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।