Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে বোরো ধান ঘরে তোলার জন্য আগাম মজুরি নিচ্ছেন শ্রমিক দলগুলো কৃষি সংবাদনীলফামারী

সৈয়দপুরে বোরো ধান ঘরে তোলার জন্য আগাম মজুরি নিচ্ছেন শ্রমিক দলগুলো

ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় তড়িখড়ি করে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রস্ততি নিয়েছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে বেশকিছু এলাকায় কাটা-মাড়াই শুরুও হয়েছে। এজন্য কৃষকরা ধানকাটা শ্রমিক দলকে আগাম মজুরি দিয়ে রাখছেন। যাতে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এই চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, বাঙালিপুর ও বোতলাগাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ধান পেকেছে। কোথাও ধান পাকতে আরও ২ সপ্তাহ লাগতে পারে। এ অবস্থায় ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। উপজেলায় বছরে দুই থেকে তিনবার ধান উৎপাদন হলেও বোরো ধানের ফলন বেশি হয়। যদিও এ ধান উৎপাদনে খরচ বেশি। সেচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বোরো ধান মাড়াই শুরু করেন উপজেলার কৃষকরা। এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকটা শঙ্কা নিয়ে দ্রুত ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।  

বৈশাখ মাস আসার আগেই শিলাবৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়। কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ে উঠতি বোরো ধান নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। পাকা ধান শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লে গোলা ভড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই বোরো ধান পূর্ণ পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেউ কেউ ধান মাড়াই শুরু করেছেন।  কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও বেশিভাগ অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে এসব কৃষক পরিবার খুশি থাকলেও বৈরী আবহাওয়া ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।  কৃষকরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েকগুন। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি বা কালবৈশাখীর কবলে পড়লে সমূলে বিনষ্ট হবে। সেই শঙ্কায় কিছুটা আগাম ধান মাড়াই শুরু করেছেন তারা। ফলনে খুশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের মূল্য এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকগণ আরো বলেন,  আকাশের যে অবস্থা। প্রতিদিন আকাশ ডাকাডাকি করে। এবার শিলাবৃষ্টি হলে একটা ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। বাকি দিনগুলো আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান ঘরে তোলা যাবে। নয়তো লোকসান গুনতে হবে। সেই সাথে আরো বলেন, সরকার সারের যে দাম বেধে দেয়। সেই দামে তো আর সার পাওয়া যায় না। বাড়তি দামে কিনে বোরো চাষ করেছি। ফলন যা হয়েছে এতেই খুশি। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আকাশ ভালো থাকলেই হয়। আর দাম যদি ভাল পাই। তবে লোকসান হবে না। সরকারি গুদামে ক্রয় শুরু হয়নি। বর্তমানের বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। ধান মাড়াই খরচ যোগাতে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সব জিনিসের দাম বাড়ে। কমে শুধু কৃষকের কষ্টের ফসলের দাম। কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হলে ধানের দামও বাড়বে। তখন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। আমাদের কষ্ট করাই বৃথা।

উপজেলার খাতামধুপুরের কৃষক শমসের আলী জানান, প্রতিবিঘা (৬০ শতাংশ) জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে কৃষি শ্রমিকের দলকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। সেই ধান মেশিনে মাড়াইয়ের জন্য ৮০০ টাকা গুণতে হচ্ছে। গেল বছর এই ধান কাটা মজুরী ছিলো সাড়ে ৪ হাজার টাকা আর ধান মাড়াই করা হতো ৬০০ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাই মজুরী বেশি। জ্বালানি তেল ও মেশিনের যন্ত্রপাতির দাম বাড়ার কারণে ধান বাড়াইয়ে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মমতা সাহা বলেন, কিছুটা বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও বোরোর ফলন মোটামুটি ভালই হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। মাড়াই করার উপযুক্ত ধান খেতে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।