Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে প্রভাবশালীর মারধর, উচ্ছেদ আতঙ্কে এক অসহায় পরিবার! নীলফামারী

সৈয়দপুরে প্রভাবশালীর মারধর, উচ্ছেদ আতঙ্কে এক অসহায় পরিবার!

নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাট এলাকায় একটি অসহায় পরিবারকে মারধর ও উচ্ছেদে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। গত ১৪ জানুয়ারী দুপুরে ওই এলাকায় বসুনিয়াপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনে আহত মা-মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। শহরের গোলাহাট নতুনকুঁড়ি বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম (৩৮) ভাই রবিউল ইসলাম (৪০), বাবা আব্দুল জব্বার (৬৫) ও চাচাতো ভাই নাজমুল ইসলাম (৩০) ও নজরুল ইসলাম (২৭) এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

জানা যায়, আরজিনারা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে যে সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছে, এখন সেই সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবী করছে মাহবুর গং। অসহায় ওই পরিবারটিকে উচ্ছেদে বাধ্য করতে উঠোনে স্তুপ করা হয়েছে বাঁশ ও গাছের ডালপালা। তাদের এমন কাজের প্রতিবাদ করায় গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ নানা ভয়ভীতি হুমকী প্রদর্শন করে। এর প্রেক্ষিতে সৈয়দপুর থানায় জিডি ও পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারটি। এতে পৌর কর্তৃপক্ষ শালিস মিমাংসার জন্য নোটিশ জারি করলে প্রভাবশালীরা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং উল্টো বাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করাসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য নানা ধরণের অত্যাচার শুরু করে। যা দীর্ঘদিন যাবত অব্যাহত থাকায় চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় ভুক্তভোগীরা।

এরই মাঝে গত ২ জানুয়ারী সকালে বসতবাড়ী মেরামতের জন্য কাজ শুরু করলে পূর্বের মতই তারা এসে বাধা প্রদান করে। এসময় তারা জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিতে উদ্ধত হয়। ঘরের ভিতর থেকে এর প্রতিবাদ করলে তারা টেনে হিচড়ে বের করে মেরে থ্যাতলা বানাবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি ভিডিও ধারণ করলে তারা কিছুটা দমিত হলেও যাওয়ার সময় বলে ১০/১২ দিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে না গেলে বা বাড়ির কোন কাজ করলে মারপিট, খুন জখম করে লাশ গুম ও বাড়ি ঘর ভাঙ্চুর করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে জবর দখল করবে। সেইসাথে মিথ্যে মামলা দিয়ে ভিটে ছাড়া করে ছাড়বে বলে হুমকি দেয়। এতে ওই দরিদ্র পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লাইলী বেগম জানান, বার বার মাহাবুব তথা আব্দুল জব্বারের পরিবারের লোকজন আমাদের উপর অত্যাচার করছে। প্রতিবার থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছেনা। ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা অসহায় দরিদ্ররা কোন সুবিচার পাচ্ছিনা। একারণে তারা আবারও গত ১৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার পুলিশ এসে তদন্ত করে যাওয়ার পর পরই আমাদের উপর চড়াও হয়। এসময় তারা আমার ও মেয়ের গায়ে হাত দেয়। এমনকি মেয়ের শ্লীলতাহানীরও চেষ্টা করে। এতে বাধা দিতে গিয়ে আমি ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছি। আমরা এই জুলুমের বিচার চাই।

আরজিনা বেগম জানান, মাহবুবের চাচা মৃত নুর ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তারা দীর্ঘদিন থেকেই আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। তাতে সাড়া না দেওয়ায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে কারণে বার বার ঝগড়া বাধিয়ে মারধর করাসহ নানাভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে। এধরণের অপকর্মের ন্যায় বিচার দাবি করছি। এতকিছুর পরও যদি সুবিচার না পাই তাহলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। কারণ গরীব মানুষের বেঁচে থাকার যেন কোন অধিকারই নাই। তাই মরে যাওয়াই ভালো। প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এভাবে অত্যাচার অব্যাহত রাখায় বেঁচে থেকেও যেন মরে গেছি। এর থেকে পরিত্রাণ চাই। এ ঘটনায়ও অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে মাহবুব আলম ও তার বাবা আব্দুল জব্বারের সাথে কথা হলে তারা জানান, লাইলী ও আরজিনার অভিযোগ সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে। মূলতঃ গোলজারের প্ররোচনায় তারা অবৈধভাবে ওই জমিতে বসবাস করছে। আমরা আইনসঙ্গতভাবে এই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছি। সেকারণে তারা ভয়ে আছে। তাই নানা ঘটনার সৃষ্টি করে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে আমাদের সম্মানহানীসহ হয়রানী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গোলজার যদি জমির মালিক হয় তাহলে আইন আদালতের মাধ্যমে এর সুরাহা না করে ওই পরিবারটিকে দিয়ে এমন জঘন্য খেলায় মেতেছে কেন? আসলে তার জমির কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। এজন্য এমন নোংরামো করছে।