Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

অসহায় বিচার প্রার্থীদের শেষ ভরসাস্থল ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ফরিদপুর

অসহায় বিচার প্রার্থীদের শেষ ভরসাস্থল ফরিদপুরের পুলিশ সুপার

সোহাগ বাড়ি শহরের হাবেলী গোপালপুর বেকার এই যুবক এক লাখ টাকা ধার দিয়েছিলো তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তিকে। হঠাৎ তাঁর শারীরিক সমস্যা হলে বার বার তাগাদা দিয়েই যখন টাকা উঠাতে পারছিলেন না তখন তাঁর মনে পরে পুলিশ সুপার মো: আলিমুজ্জামানের কথা। তাঁর অবারিত খোলা দরজায় ঢুকেই সমস্যা জানাতে যতটুকু দেরি। তাঁর কাজটি হতে আর সময় নেননি পুলিশ সুপার। এরপর টাকা পেয়ে ধন্যবাদ জানাতে এসপির দরজায় এসে তাঁর চির কৃতজ্ঞতার জানাতে ভুলেননি সোহাগ। দেখা করেই রওনা দিলেন চিকিৎসা করাতে ভারতের কলকাতায়।   

নগরকান্দার মমতাজ (ছদ্মনাম) স্বামীর সাথে কোন ভাবেই বনিবনা হচ্ছিলো না। এর ভিতর গোপনে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিলেন বিদেশে। খবরটি জানতে পেরে মমতাজ পুলিশ সুপারের কাছে ছুটে আসেন। তাঁর কথা শুনে পুলিশ সুপার তৎখনাত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এখন ওই নারী প্রতিনিয়ত এই কাজটি করে দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই।   

এভাবে জেলার আইন শৃৃংখলা রক্ষায় তিনি যেমন কঠোর তেমনি সকাল দশটা থেকে রাত ১১টা অবধি তাঁর দরজা অসহায় এই সব মানুষের জন্য খোলা। প্রতিদিন শত শত মানুষের কথা ধৈর্য্য ধরে শুনে সমাধান দিচ্ছেন তাৎখানিক সময়ে। এভাবে মানুষের জন্য কাজ করা তাঁর জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা এখন সারা দেশে রোল মডেলে পরিনত হয়েছে। 

জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটি সুচারুপে করে চলছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান (বিপিএম-সেবা)। এই কর্মকে বাস্তবায়িত করতে তার জেলা পুলিশ টিম সঙ্গে নিয়ে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঘটনা ঘটার দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেই কাজ শুরু করেন ঘটনার পেছনের ঘটনা তুলে নিয়ে আসার কাজে। আর এই কাজে তাঁর টিম ও সাধারণ মানুষ এক হয়ে হাত বাড়িয়ে তাঁকে তথ্য উদঘাটনেও সাহায্য করে থাকেন। 

এসপি আলিমুজ্জামান একটি স্লোগান ধারণ করে কাজ করছেন ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। তিনি এটি শুধু স্লোগানের মধ্যে রাখতে চান না, এটি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।  

যৌন হয়রানি, জঙ্গিবাদ, মাদক বাণিজ্য, হত্যা, সড়কে ডাকাতি মামলাসহ সব ধরনের অপরাধ দমনে এসপি আলিমুজ্জামানের  সাহসী ভূমিকা নজর কেড়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। জেলার বড় বড় সব ক্লুলেস হত্যাসহ অপরাধের যেকোনো বিষয় প্রযুক্তির সহযোগিতায় অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি সামনে তুলে নিয়ে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে মধুখালীর লিপি হত্যা ও শিশুসহ কয়েকটি ঘটনা, ফরিদপুর সদর উপজেলার ফাতেমা হত্যা, বেড়িবাঁধে এক নারী হত্যা, ইজিবাইক চালক হত্যা, ভাঙ্গার গোলচত্বরে গাড়ির হেলপার হত্যা, হাতুরী বাহিনী ও হেলমেট বাহিনী শেখর গোড়া থেকে মূল উৎপাটন, বেশ কয়েকটি মটর সাইকেল চোর চক্রকে আটকসহ বিভিন্ন ঘটনায় খুব দ্রুত সময়ে উদঘাটন করে অপরাধ দমনে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।

দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুবকদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় আয়োজন করা হচ্ছে অপরাধমুক্ত ভাবনা বিষয়ক আলোচনা। একই সঙ্গে মাদকের ভয়াবহতা থেকে কীভাবে তারা দূরে থাকবে, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে এই সব আলোচনা থেকে। 

তাঁর নেতৃত্বে দেশের করোনা সহ সংকটকালীন সময়ে জেলার অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। পুলিশের বেতনের একটি অংশ তিনি প্রতিনিয়ত এই সব সংকটকালীন সময়ে ব্যয় করেছেন। তাঁর দরজায় যে কোন ব্যক্তি সাহায্যর জন্য আসলে তাকে খালি হাতে যেতে হয় না এই কথাটি এখন জেলার বাসিন্দাদের মুখে মুখে। 

দুটি প্রক্রিয়াই ছিল দালাল বাহিনীর হাতে জিম্মি এত দিন। সেই জিম্মি ব্যবস্থাকে এসপি আলিমুজ্জামান করেছেন সহজ ও দ্রুততর। এখন একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে একজন মানুষকে আর ঘুরতে হয় না। এক সপ্তাহ ও কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে এটা নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন এখন হয়েছে অনেক সহজ ও দ্রুততর। এখন সাধারণ মানুষকে একটি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন হয়ে যেতে সময় লাগে মাত্র তিন দিন। এ ক্ষেত্রে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। যা এর আগে টাকা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। 

ফরিদপুরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী) নিরাপত্তায় মাত্র এক হাজার ৩৬৩ জন পুলিশ পর্যাপ্ত নয়। নানা সীমাবদ্ধতা ভাবনায় রেখে জেলার নয়টি উপজেলা ও পাচঁটি পৌরসভাসহ ৮১টি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে স্থানীয় কমিটি। কমিউনিটি পুলিশিং এবং গ্রাম পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে দিনরাত কাজ করেছেন পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান। এসব প্রচেষ্টার কারণে কমিউনিটি পুলিশিং ও গ্রাম পুলিশিং কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল বলে মনে করে সচেতনমহল এই ফরিদপুরে। এছাড়া বিট পুলিশিং ব্যবস্থা এখন জন কল্যানে একটি মডেল ব্যবস্থা ফরিদপুরে। 

এসপি আলিমুজ্জামান কাজ করে চলছেন জেলার বাসিন্দাদের  নাগরিক তথ্য তৈরির কাজে, যাতে তাদের সব বিষয় একটি অনলাইন ডাটাবেসে থাকে। এতে সামনের দিনে যেকোনো পুলিশি তথ্য আর খুঁজতে বেশি সময় না লাগে। এতে একজন মানুষ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে পুলিশ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনার এটি একটি বড় গঠনমূলক ব্যবস্থা বলে ধরছেন বিশিষ্টজনরা।

এখন থানায় এসে একটি অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করতে কোনো ঘুষ বা প্রভাব খাটাতে হয় না। যেকোনো সাধারণ মানুষ থানায় এসে অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন।

পুলিশ সুপার হিসেবে তার সততা, যোগ্যতা ও মেধার স্বীকৃতি স্বরুপ পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম সেবা) এবং ২০১৭ ও ২০১৯ সালে দুবার এসপি আলিমুজ্জামান অর্জন করেন আইজি ব্যাচ। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই ফরিদপুর যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

এবিষয়ে পুলিশ সুপার মো: আলীমুজ্জামান বলেন, আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি মানুষের সামনে থাকা বাঁধা অপসারন করে তার কাজটি কত দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা যায়। তিনি বলেন, ভালো কাজ করতে কোন কিছুর দরার নেই চাই শুধু মনের ইচ্ছা। আমি এই ইচ্ছা শক্তিটি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। তবে জেলার মানুষের জন্য ভালো পুলিশি ব্যবস্থা তৈরি করতে সব ধরনের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে পুলিশে। যাতে মানুষের জন্য সহজতর হয় পুলিশি ব্যবস্থা। পুলিশ নিয়ে আর ভয় নয় পুলিশ মানুষের বন্ধু হবে এটাই আমার চাওয়া।