Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় তোলপাড় নীলফামারী

পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় তোলপাড়

নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী'র নামে আদালতে অর্থ আত্মসাতমূলক প্রতারণার মামলার খবরে শহরজুড়ে তোলপাড় চলছে। মুখরোচক সমালোচনায় মুখর জনসমাগম স্থানগুলো।

মামলার পর থেকে মেয়রকে পৌরসভা অফিসে ও বাসায় না পাওয়ায় শুরু হয়েছে কৌতুহল। এমনকি মেয়র তার মুঠোফোনে নিজে কথা না বলে অন্যদের ধরিয়ে দেয়ায় ডানা মেলেছে নানা জল্পনাকল্পনা। গত ২ দিন ধরে এই বিষয়টিই পরিনত হয়েছে 'টক অব দ্যা টাউন'-এ।

গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর)  সৈয়দপুর আমলি আদালতে মামলাটি করেন শহরের বাঙ্গালিপুর নিজপাড়ার মৃত ওমর আলী ফারুকীর ছেলে গাউসুল আযম ফারুকী। মামলা নং পি-১০৬/২০২১। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডি কে ন্যাস্ত করেছেন। মামলার ঘটনায় মেয়র গা ঢাকা দিয়েছেন বলে চাউর হয়েছে।

সেইসাথে মেয়রের ছোট বোনের স্বামী ও কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগের পৌর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় ঘটনার সত্যতা নিয়ে জনমনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পৌরসভা থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নকশা অনুমোদন নিয়ে ৬ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন গাউসুল আযমের বাবা। মাঝে বাবার মৃত্যুর পর নকশা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে স্থানীয় কাউন্সিলর। এতে অনেক হয়রানীর শিকার হন তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে কাউন্সিলর ও মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং হাইকোর্ট থেকে রায়ও পান।

বর্তমানে ওই ভবনে লিফট স্থাপনের প্রয়োজন হওয়ায় নতুনভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য পৌরসভায় আবেদন করেন গত বছরের প্রথম দিকে। কিন্তু আগের বিরোধের জের ধরে তৎকালিন মেয়র তা অনুমোদন দেননি। ইতোমধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে পৌর নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা হয়। এতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান সদ্য প্রয়াত উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদলের স্ত্রী রাফিকা আকতার জাহান বেবী।

এমন সময় পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে মেয়র রাফিকা আকতার জাহান তার ব্যক্তিগত ম্যানেজার শহরের নয়াটোলা মহল্লার মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে হাসানুজ্জামান আজমকে দিয়ে গাউসুল আযম ফারুকীকে বাসায় ডেকে নিয়ে প্রস্তাব দেন যে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে ফারুকীর নকশা অনুমোদন দেবেন।  এজন্য মেয়র তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন।

সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর এবি ব্যাংক লিমিটেড সৈয়দপুর শাখায় নিজের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সেই টাকা দেন ফারুকী। ২৩ ডিসেম্বর চেকটি নগদায়ন করে ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন মেয়রের ব্যক্তিগত ম্যানেজার হাসানুজ্জামান আজম।

এরপরও নকশা অনুমোদিত না হওয়ায় ফারুকী আবার চলতি বছরের ২২ আগস্ট মেয়রের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। এ সময় মেয়র নকশা অনুমোদনের জন্য আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফারুকী মেয়রের কাছে নকশা অনুমোদনের বিষয় জানতে চাইলে আগের এক লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন মেয়র।

এ ঘটনায় মেয়রের নামে প্রতারণার অভিযোগে সৈয়দপুর আমলি আদালতে মামলাটি করেন গাউসুল আযম ফারুকী। মামলায় দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে মেয়রের ব্যক্তিগত ম্যানেজার হাসানুজ্জামান আজমকে।

সৈয়দপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সেলিম বলেন, গাউসুল আযম ফারুকী এক মাস আগে লিফটের নকশা অনুমোদনের জন্য কাগজপত্র দাখিল করেছেন, যা তদন্তাধীন। তা ছাড়া তার ভবনের জমির জটিলতা বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা ছিল। আগের মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেও তিনি ইতোপূর্বে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা করেছিলেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী'র মুঠোফোনে কয়েকবার কল দেয়ার পর রিসিভ করেন ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না সরকার। তিনি জানান, মেয়র অসুস্থ, তিনি কথা বলবেন না।

পরে মুন্না সরকার মামলার বিষয়ে বলেন,  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাফিকা আকতার জাহান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ বিগত বছরে তাঁকে নকশা অনুমোদনের জন্য টাকা দেওয়ার বিষয়টি হাস্যকর। মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে মেয়রকে হয়রানি ও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করাই বাদীর মূল উদ্দেশ্য। আমরা পৌর পরিষদে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ব্যাপারে আইনী লড়াই করবো।