Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

মিরকাদিম মেয়রের বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ মুন্সিগঞ্জ

মিরকাদিম মেয়রের বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালামের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি গ্যাস লিকেজ থেকেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।  বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক। 

তিনি জানান, ঘটনার পর রাতভর বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিউট, পুলিশ ও সিআইডি ঘটনাস্থলে কাজ করেছেন। এছাড়া সিআইডি, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলের আলামত পরিক্ষা করে বোমার কোন আলামত পায়নি। পর্যবেক্ষণ শেষে বিস্ফোরণটি গ্যাস লিকেজ থেকেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাত নয়টার দিকে পৌরসভার রামগোপালপুর  এলাকায় এ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পৌর মেয়র আব্দুস সালামের স্ত্রী, পৌরসভার প্যানেল মেয়রসহ ১৩জন দগ্ধ হয়েছে।  আহতরা হলেন, মিরকাদিম পৌরসভার প্যানেল মেয়র রহিম বাদশা(৫৫), আওলাদ হোসেন (৪০), কাউন্সিলর দ্বীন ইসলাম(৪০), মোঃ সোহেল(৫২), মেয়র আব্দুস সালামের  স্ত্রী কানন বালা (৪০),  যুবলীগ কর্মী তাইজুল(২০), মোঃ মোশারফ(৬২), মনির হোসেন(৫০), শ্যামল দাশ(৪৫),  পান্না(৫০), কালু(৪০), ইদ্রিস আলী (৫০), ও মহিউদ্দিন(৫২)। 

এদের মধ্যে রহিম বাদশাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।  বাকি ১২জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুত্বর আহতদের মধ্যে মেয়রের স্ত্রীর কানুন বালা বেগমকে আশংকাজনক অবস্থায় আইসিউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার দেহের ৬০ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শৈবাল বসাক।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মেয়রের চার তলা বাসার তৃতীয়তলার একটি কক্ষে মেয়রের সঙ্গে আলাপচারিতা করছিলেন পৌর কাউন্সিলরসহ অন্যান্যরা। হঠাৎ করেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহুর্তে কক্ষের ভেতর আগুনের শিখা দেখা যায়। বিস্ফোরণে কক্ষের আসবাবপত্র, জানালার কাঁচ ফেঁটে চুরমার হয়ে গেছে। এ সময় বিস্ফোরনের শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মেয়র স্ত্রীর ও  প্যানেল মেয়র সহ ১৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার আবু ইউসুফ জানান, গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকেই  ঘরে গ্যাস ছড়িয়ে থাকায় এঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। সে সময় মেয়র স্ত্রী রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে এমন বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

প্যানেল মেয়র রহিম বাদশা জানান, পৌরসভার একটি কাজের ব্যাপারে চারজন কাউন্সিলরসহ আমরা কয়েকজন মেয়রের বাসায় আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ কিছু একটা বিস্ফোরণ ঘটে। কিসের থেকে এমন বিস্ফোরণ ঘটেছে তা এখনও বলতে পারছি না।

মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালাম জানান, পরিকল্পিত ভাবে আমার হত্যার উদ্দেশ্যে একটি কুচক্রি মহল বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমি ভাগ্যক্রমে রক্ষা পাই। এতে আমার স্ত্রী সহ ১৩ জন দগ্ধ হয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম বলেন, আমি এবং জেলা প্রশাসক বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোন বোমার আলামত পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার রাতেই বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিস ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমাদের জানান, নবনির্বাচিত মেয়র আব্দুস সালামের বাসায় যে কোন কারনে গ্যাস লিকেজ থাকায় পুরো বাসায় গ্যাস চেম্বর হয় এবং স্পার্কের ফলে বিস্ফোরনের ঘটনাটি ঘটেছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, মঙ্গলবার রাতে মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালামের বাড়িতে একটি বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই পুলিশের টিম ও ফায়ার সার্ভিসের টিম সেখানে যায়। তারা সেখানে বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করে। বুধবার আমি এবং জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। সেখানে আমরা দেখতে পাই রানা ঘড়সহ কয়েকটি কক্ষে আগুনের চিন্হ রয়েছে। আমরা সেখানে কোন বিস্ফোরক দ্রব্যের আলামত দেখতে পাইনি। আমরা প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছি গ্যাসের চুলা থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সেখানে পুলিশের টিম, সিআইডি’র টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এ ঘটনায় কাজ করছে।