Opu Hasnat

আজ ১৭ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

আপনার কেনা স্যানিটাইজারে আদৌ ভাইরাস মরছে তো? চিকিৎসকরা কী বলছেন লাইফ স্টাইল

আপনার কেনা স্যানিটাইজারে আদৌ ভাইরাস মরছে তো? চিকিৎসকরা কী বলছেন

করোনা আটকাতে গেলে কী করতে হবে? মাস্ক পরতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া বার বার হাত ধুতে হবে। এ কথা আট থেকে আশি-- সবারই জানা। কিন্তু সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে যাওয়া মানেই আবারও উঠতে হবে জায়গা থেকে। ধুর ভাল লাগে নাকি এত বার ওয়াশরুমে যেতে?

যাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, বাড়ি ফিরে আবারও ঝক্কি। স্নান করতে তো হবেই, ব্যাগ পর্যন্ত কাচতে হবে। সম্ভব নাকি? এই দুয়েরই সমাধান আছে স্যানিটাইজারে বা ডিজইনফেকট্যান্টে। একটু স্প্রে করে নিলেই বা হাতে একটু লাগিয়ে নিলেই শান্তি। কেউ ভাবছেন, ব্লিচিং পাউডার জলে গুলে ব্যাগটা চুবিয়ে নিলেও তো হয়। কেউ ভাবছেন, বাজার থেকে ফেরার সময় স্যানিটাইজিং টানেল হয়েই তো এলেন। ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তা হলে তো আর নেই। সত্যিই কি তাই? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

স্যানিটাইজার ব্যবহারের আগে কী নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে?
প্রথমত, যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন বেশির ভাগ সময় তাঁরা সাবান জলে হাত ধুলেই হবে। বার বার হাত ধুতে হবে, অন্তত আধ ঘণ্টা ৪০ মিনিট অন্তর, এমনটাই বলেন সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, সাবান দিয়ে হাত ধোওয়াই ভাল। তবে যাঁরা বাইরে বেরচ্ছেন, রাস্তায় তো সাবান জল দিয়ে হাত ধোওয়া সব সময় সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

ডা. অমিতাভ বললেন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে, তাতে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে কি না। ডা. অরিন্দমের মতে, ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকলে তবেই সেই স্যানিটাইজার স্প্রে-তে কাজ হবে।

ডা. অমিতাভ সতর্ক করেন, বাজারে নানা রকম সুগন্ধী স্যানিটাইজার কিংবা স্প্রে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সবক’টাই যে ভাইরাসনাশক এমনটা কখনও নয়। বরং করোনা আবহের আগে যে সংস্থাগুলি স্যানিটাইজার বিক্রি করত, তাঁদের থেকে কেনাই ভাল। খানিকটা হলেও এতে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। এখন বাজারে এত রকম স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে, এতে বিভ্রান্তি বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রশাসনকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে বা লিকুইড মানেই কি ভাইরাস মরবে?
স্যানিটাইজারের মতোই এ ক্ষেত্রেও যদি অ্যালকোহলের পরিমাণ ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হয়, তবেই ভাইরাস মরবে। ডা. অমিতাভ জানালেন, অফিস থেকে ফিরে অনেকেই চামড়ার ব্যাগে এ জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করে নিচ্ছেন, ভাবছেন আর চিন্তা নেই। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল। জীবাণুনাশক স্প্রে মানেই তা ভাইরাস মারবে, এমনটা নয়। সব সময় দেখে নিতে হবে অ্যালকোহলের পরিমাণ। না জেনেই ব্যাকটিরিয়ানাশক স্প্রে ব্যবহারের ফলে একটি সুরক্ষার অনুভূতি তৈরি হচ্ছে, যেটা আসলে মিথ্যা। এ জাতীয় কোনও ভুয়ো যন্ত্রে যাতে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়, তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনেরই। 

কী ধরনের অ্যালকোহল ব্যবহার হলে তা ভাইরাস মারতে সক্ষম?
মেডিসিনের চিকিৎসক কল্লোল সেনগুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, ইথানল বা ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল থাকলে সেটিও কাজ করবে। কিন্তু তার পরিমাণ যেন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হয়।

ভাইরাসের লিপিড আস্তরণকে নষ্ট করে দিতে পারে সাবান জল বা ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল। শুধু জলে যা কখনও সম্ভব নয়। জলে দ্রবীভূত হয় না বলেই ভাইরাস সে ক্ষেত্রে মরবে না। অ্যালকোহলের পরিমাণ কম হলে তার ভাইরাসনাশক ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এ কথা বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. অরিন্দম। তিনি জানান, এই বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই। ফলে মানুষও বিভ্রান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন। তবে সরকারের তরফে যে বার বার সাবান জলে হাত ধোওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি ভাইরাস বিনাশে উৎকৃষ্টতম পদ্ধতি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাস-গাড়িতে যাতায়াতের সময়টুকু স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়।

হাত তৈলাক্ত থাকলে বা চামড়ার ব্যাগ জাতীয় পদার্থে কি স্প্রে বা স্যানিটাইজার ভাইরাসনাশক হিসাবে কাজ করবে?

হাত তৈলাক্ত থাকলে, ধুলো লেগে থাকলে স্যানিটাইজার বা স্প্রে-র কাজ সম্পূর্ণ হবে না। সাবান জল সে ক্ষেত্রে তেলটাও সরিয়ে দিতে পারবে। মারতে পারবে ভাইরাসও, কারণ একটা লিপিড অন্য লিপিডে দ্রবীভূত হয়ে যাবে। ফলে হাত পরিষ্কার হয়ে গেল। এ কথা জানান ডা. অরিন্দম। ডা. কল্লোল বলেন, চামড়ার ব্যাগ বা এ জাতীয় জিনিস একান্তই ব্যবহার করতে হলে তা বাইরে থেকে ফিরে দরজার বাইরে রেখে দিতে হবে এক জায়গায়। পরিষ্কার করতে হলে সে ক্ষেত্রে অ্যালকোহল সোয়াব ব্যবহার করা যেতে পারে, সেখানেও ইথাইল অ্যালকোহলের পরিমাণ দেখে নিতে হবে।

ব্লিচিং পাউডার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়?
ঘরের মেঝে, বেসিন, শৌচাগার, বারান্দায়, ঘর মুছতে ব্লিচিং পাউডার বা কড়া কোনও ফিনাইল ব্যবহার করতে হবে। এগুলিও ভাইরাসনাশক। কিন্তু জামাকাপড় কাচার সময় সাবান জলই যথেষ্ট, এতে ব্লিচিং পাউডার দিলে জামা নষ্ট হয়ে যাবে। খালি হাতে কখনওই ব্লিচিং পাউডার ধরা যাবে না। চামড়ার ব্যাগেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে তা ঔজ্জ্বল্য হারাবে।

বাড়ির পাশেই করোনা আক্রান্ত ছিল, কিংবা বাড়িতেই কেউ আক্রান্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ধোঁয়া স্প্রে দিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়েছে। এতে ভাইরাস মরে যাবে?

সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটে বেশি ক্ষণ থাকলে ভাইরাস মরে, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। পিপিই পরে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের মাধ্যমে ধোঁয়া দিলে ভাইরাস অবশ্যই মরবে। কিন্তু কোনও পিপিই না পরা অবস্থায় সেখানে যেন কেউ না থাকেন। কারণ তা চোখ এবং ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। বাজারে বা নানা জায়গায় এই হাইপোক্লোরাইটের যে টানেল তৈরি হয়েছে, সেগুলি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. অমিতাভ। আনন্দবাজার