Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

দখল আর দুষণে ঝিনাইদহের নদ-নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে! ঝিনাইদহবিশেষ সংবাদ

দখল আর দুষণে ঝিনাইদহের নদ-নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে!

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। জেলার ৬ টি উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ১২ টি নদ-নদী। কিন্তু খননের অভাব আর দখলদারদের কারণে নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। এখন আর যৌবন নেই নদ বা নদীগুলোতে। পাওয়া যায়না দেশীয় প্রজাতির মাছ। শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকেনা। সেখানে চাষ করা হয় ধান, পাট, সরিষাসহ নানা ফসলের আবাদ।

এই সুযোগে নদীর পাড়ের জায়গা দখল করতে ব্যস্ত দখলদাররা। ঝিনাইদহে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী ও  বুড়ী নদ-নদী। যার মোট আয়তন ১ হাজার ৬’শ ৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর।

ঝিনাইদহ শহরের বুকচিরে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী। নদীর বিভিন্ন স্থানে নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে নদীতে। এসব কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সঙ্গে মাছসহ জলজ প্রাণী ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। তাই দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি স্থানীয়দের।

ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চন নগর এলাকার ষাটোর্ধ মোস্তফা বলেন, ছোটকালে দেখেছি নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় নৌকা আসত। ধোপাঘাটা ব্রীজ এলাকায় নৌকা নোঙর করে ব্যবসায়ী ঝিনাইদহ শহরে যেত। কিন্ত সেই নদীতে এখন ডিঙ্গি নৌকাও চলে না। বর্ষা মৌসুমে একটু পানি থাকলেও শীত মৌসুমে পানি থাকে না। হেটেই নদী পার হওয়া যায়।

একই এলাকার পার্থ মল্লিক নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে নদী খনন করা হলে নদীগুলো তার নাব্যতা ফিরে পেত। এ জন্য জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নদী রক্ষা কমিটির নেতা মিজানুর রহমান বলেন, জেলার সবগুলো নদীই এখন দখলদারদের দখলে। এ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য আমরা প্রশাসনকে বার বার তাগাদা দিচ্ছি। তাদের সাথে মিটিং করছি, স্মারকলিপি দিচ্ছি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আজ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন প্রদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। সারাদেশের ন্যায় ঝিনাইদহে নদীগুলো দখলমুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, নবগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুয়াডাঙ্গাতে বন্ধ হয়ে আছে। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে আসা এ নদীটির মুখ বন্ধ হয়ে আছে বহুবছর ধরে। এবার চুয়াডাঙ্গা জেলাকে অনুরোধ করা হয়েছে উৎসমুখ খনন করার জন্য। সেখানকার জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন উৎসমুখ খনন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তবনা পাঠিয়েছেন। সেখানে খনন করা হলে চিত্রা, বেগবতি আর নবগঙ্গা কিছুটা হলেও পানি পাবে। এছাড়াও যেসব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানে দ্রুতই অভিযান চালিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।