Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে ব্যস্ত সময় পার করছে কামারগণ নীলফামারী

সৈয়দপুরে ব্যস্ত সময় পার করছে কামারগণ

সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে সৈয়দা রুখসানা জামান শানু : ঈদকে সামনে রেখে কর্মকারদের কারখানায় ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুন। চলছে লোহা কাটাকাটি, কয়লার পোড়া গন্ধ হাঁপড়েরর হাঁসফাঁস আর হাতুরির টুংটাং এবং শানের শোশো শব্দ। যেখানে কয়লার আগুনে লাল করে পিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ পিস করে দা ও কুড়াল তৈরি করা হচ্ছে। তারপর ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, যশোরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে। 

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ওয়াপদা মোড়ে বাইপাস সড়কের পাশে দা ও কুড়াল তৈরির কারখানাটি গড়ে তোলেন বর্তমান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন হোসেন। ২০০৯ সালে তিনি পরীক্ষামুলকভাবে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে এ কারখানার তৈরি দা ও কুড়ালের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে ৮টি হাঁপড় (ভাতি) বসিয়ে দিনে-রাতে এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করে চাহিদা অনুযায়ী পাইকার ও মহাজনদের কাছে সরবরাহ করছেন।

প্রথমে সাইজ করে লোহা কেটে কয়লার আগুনে লাল করা হয়। হাঁপড়ের বাতাসে লাল লাল টুকটুকে করে লাইনের উপরে রেখে হাতুরি দিয়ে একের পর এক পেটানো হয়। দা ও কুড়ালের সাইজ না আসা  পর্যন্ত লোহার তপ্ত খহুটি একবার আগুনে একবার পানিতে ভিজে অনবরত হাতুরি চলতে থাকে। আর এভাবেই তৈরি হয় দা ও কুড়াল। তারপর এগুলো একত্রিত করে শান দেওয়ার কাজ করে চকচকে করে তোলা হয়। হাটবাজারের কামাররা দা, কুড়াল, কোদাল, ছুরি, বটি, বাশিলা, হাসুয়া, কাঠারি ইত্যাদি তৈরি করলেও এখানে শুধুমাত্র দা ও কুড়াল তৈরি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই কারখানার তৈরি কুড়াল সর্বত্র চাহিদা রয়েছে। বাঁকা ধরণের দা এই জনপদে কম চললেও ঢাকাসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে এর চাহিদা ব্যাপক। কারখানায় সবকিছু চলছে তাল মিলিয়ে। একসাথে চলছে হাঁপড়, লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ আর  দলবদ্ধভাবে দা কুড়ালে শান দেওয়ার দ"শ্য কাজের পরিবেশ স"ষ্টি করেছে বলা চলে। 

কারখানায় ৮টি হাঁপড়ে (ভাতি) ৮ জন কামার, টানার জন্য সহযোগি এবং শেষ ধাপে শান দেওয়ার জন্য দৈনিক মজুরীতে লোক রেখে কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে। সব মিলে কারখানায় ৬০ জনের মতো লোক কাজ করছেন। এদের মজুরী ৩৭৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। এতে করে এলাকার বেশকিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

কারখানা কর্ত"পক্ষ ৬৫/৬৭ টাকা কেজি দরে লোহা কিনেন। সেই লোহা কয়লার লাল করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা ও কুড়াল। ব্যবহার উপযোগি করার জন্য শান দেওয়ার পর দা ১২২ থেকে ১২৪ টাকা এবং কুড়াল ২শ’ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারাবছরই এই কারখানায় কাজ হলেও কোরবানি ঈদে কারখানায় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। 

বাইরে থেকে লোহা কিনে কারখানাটি পরিচালিত হয় বলে মালিক পক্ষ দাবি করেন। কিন্ত অভিযোগ রয়েছে এর বেশিরভাগ লোহা আসে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা ভেতর থেকে চোরাই পথে। কারণ রেলওয়ে কারখানা থেকে এই দা ও কুড়াল তৈরির কারখানাটি খুব কাছেই অবস্থিত। সেকথার প্রমাণ মেলে কারখানাটির গুদামে রক্ষিত রেলের লাইন, স্প্রীং ও অন্যান্য সামগ্রী দেখে। এছাড়া কারখানায় হাঁপড় টানতে ও লোহা পেটানোর কাজে শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দা ও কুড়াল তৈরির কারখানায় এক বৃদ্ধ তার অমূল্য সম্পদ একটি চোখও হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কথা হয় কারখানার মালিক শাহীন হোসেনের সাথে। তিনি রেলের লোহা চোরাই পথে আসার কথাটি অস্বীকার করে বলেন, লোহা ও কয়লার দাম বেড়েছে। দা ও কুড়াল তৈরির কামাররাও এখানে বেশি দিন কাজ করতে চায় না। ফলে দা ও কুড়াল তৈরির কারখানাটি চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ তাই কারখানায় পুরোদমে কাজ চলছে। নির্দিষ্ট এসব সামগ্রী সরবরাহের জন্য সকল শ্রমিকরা দিনেরাতে কাজ করছেন বলে জানান তিনি। কারখানাটি টিকিয়ে রাখার জন্য সহজ শর্তে ঋন ও সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন শাহীন হোসেন।