Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

কুষ্টিয়ায় গৃহ বধুকে পিটিয়ে হত্যা নারী ও শিশুকুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় গৃহ বধুকে পিটিয়ে হত্যা

কুষ্টিয়ার বোয়ালদাহ গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে ছোট জা’য়ের নির্মম নির্যাতনে বড় জা গৃহবধু রেহেনা (৪৪)’র মৃত্যু হয়েছে। 

শনিবার রাত ১২টা মুমুর্ষ রেহেনাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের কন্যা ও প্রত্যক্ষদর্শী সাহান্নারা খাতুন (১৮) জানায়, ২৯ মে রাতে ছোট চাচি দিনমজুর রশিদের স্ত্রী সাবিনার ঘরে প্রতিবেশী মৃত হারানের ছেলে রাশিদুল ঢুকেছিল এসময় গৃহবধু মা রেহেনা তা দেখে ফেলায় তাতে ক্ষুব্ধ হয় সাবিনা। পরদিন ৩০ মে সকালে চাচি সাবিনা, রাশিদুল, নাজমুলসহ ৪/৫ জন ক্ষুব্ধ হয়ে মা’য়ের উপর আক্রমন করে এবং বাঁশের গোড়ালী দিয়ে বেধরক আঘাত করলে সেদিন থেকেই রেহেনা জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ে।

স্থানীয় এলাবাসী জানায়, মৃত আফসার আলী’র ছেলে দিনমজুর রশিদদের স্ত্রী সাবিনার সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী মৃত হারানের ছেলে রাশিদুলের অবৈধ সম্পর্কের কথা সবাই জানে। ঘটনার দিন রাতে সাবিনার স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাশিদুলকে সাবিনার ঘরে ঢুকতে দেখে ফেলে রেহেনা। বিষয়টি যাতে আর কখনও না হয় সেজন্য দেবরের স্ত্রী সাবিনাকে সতর্ক করে রেহেনা। এই ঘটনার জের ধরেই সাবিনা ও বড় জা জামিরুলের স্ত্রী নাজমা, ভ্রাতুষ্পূত্র নাজমুলসহ ৪/৫ মিলে রেহেনাকে চুল ধরে টেনে হিচরে পাশর্^স্ত কাঁঠাল বাগানে মাটিতে ফেলে দিয়ে বেধড়ক প্রহার করে, এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তখন থেকেই গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে রেহেনা। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রভাবশালী মজনু মেম্বার খ্যাত এ নেতৃত্বে শালিশী মিমাংশার নামে অর্থ আদায় করা হয় রেহেনাকে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ঘটনাটি ঐ পর্যন্তই শেষ করতে চেয়েছিল প্রভাবশালীরা। এদিকে মারাত্মক অসুস্থ্য রেহেনা চিকিৎসা না পেয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়ায়। 

শনিবার রাতে অবস্থা বেগতিক দেখে রেহেনাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কথা বলে জানা যায়, শনিবার রাতে ঐ নামে নির্যাতনের শিকার হয়ে কোন মহিলা ভর্তি হয়নি। তবে কেউ যদি হাসপাতালে এসে নির্যাতনের কথা গোপন রাখে তাহলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কিছু করার থাকে না। 

হাসপাতালের একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে রেহেনার মৃত্যু হলে ঐসকল প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ময়না তদন্ত না করে রাতেই নিহত রেহেনার লাশ নিয়ে গ্রামে চলে যায়। 

নিহতের স্বামী ভ্যান চালক সানোয়ার হোসেন ছানা অভিযোগ করেন, রেহেনাকে বাঁশের গোড়ালী দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বেদম মারধর করার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমি এর দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি চাই। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম মুশতাক হোসেন মাসুদ জানান, রেহেনা নামের মহিলাকে কয়েকদিন পূর্বে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক জখম করেছিল, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা হলেও তা ধামা চাপা দিতেই ময়না তদন্ত না করে তরিঘরি লাশ দাফনের চেষ্টা করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) রবিউল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্যাতনের শিকার গৃহবধু রেহেনার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। সুরতহাল প্রস্তুতকালে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতের দেহের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। এ বিষয়ে নিহতের স্বামী সানোয়ার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে অভিযুক্ত আসামীরা পলাতক থাকায় এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।