Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

পিরোজপুরের নারী জাগোরনী হ্যাপীর গল্প সাক্ষাৎকারপিরোজপুর

পিরোজপুরের নারী জাগোরনী হ্যাপীর গল্প

পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত কল্যানকর কাজ হয়েছে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে অংশিদার । কিন্তু সমতার এই নীতি যেন কবির কবিতা ও পুথির মাঝে এখনো লিপিবদ্ধ । বর্তমান সময়ে বিশ্বে এর কিছুটা পরিবর্তন হলেও বাকী রয়ে গেছে অনেকটাই । তাইতো যুগে যুগে নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অনেকই এগিয়ে এসেছেন। 

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারী শিক্ষা, নারীদের সাবলম্বী করা, নারীরা ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি বৈষম্য মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে চলেছে  বর্তমান সমাজের অনেক জাগোরনী । তেমনি একজন পিরোজপুরের সালমা রহমান হ্যাপী । নারী জাগরনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নাম । যিনি জীবনের একটি বিরাট অংশ ব্যায় করে চলেছেন পিরোজপুর জেলার নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে । জেলার নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারী শিক্ষা, নারীদের সাবলম্বী করা, নারীরা ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি বৈষম্য মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন এখনো। তার এসকল কর্মকান্ড উৎসাহিত করছে জেলার অন্য নারীদের । 

পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬৫ সালে তিনি জন্ম গ্রহন করেন । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ওমর ফারুখের বোন তিনি । তার পিতা মৃতঃ সৈয়াদুর রহমান শরীফ ছিলেন তৎকালীন মহাকুমা আদালতের একজন পেশকার, আর মাতা কুলসুম বেগম একজন গৃহিনী । চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম সন্তান । শিক্ষা জীবনের শুরু স্থানীয় পূর্ব আমড়াজুরি হাইস্কুল বিদ্যালয় থেকে এরপর তার পিতার বদলি জনিত কারনে যশোর ও কুষ্টিয়াতে পড়ালেখা করতে হয় । ১৯৮৩ কুষ্টিয়া সরকারী গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন । তারপর বিভিন্ন কারনে পড়াশুনা হয়ে ওঠে নি তার। এরপর বিয়ে হয় পিরোজপুরের শংকরপাশার এক সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে আলহজ মুজিবর রহমান খালেক ( বর্তমানে পিরোজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান) সাথে। নারী দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে এই নারী জাগরনী মহিয়সীর সাথে কথা বলেছেন আমাদের প্রতিনিধি শুভ রায়- 

টাইমটাচনিউজ : কিভাবে আপনি নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্দ্যোগী হয়েছিলেন ?
সালমা রহমান :
ভাল কাজ করার জন্য কোন কিছু প্রয়োজন হয় না । যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে কাজ করার ইচ্ছে শক্তি । মফস্বলের জেলাগুলোতে এখনো নারীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাধ্যমে তাদের জীবন কাটাচ্ছে, নানা ভাবে অসমতার স্বীকার । আমি একজন নারী আর আমি এটা জানি কিভাবে হচ্ছে । এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হত, তাহলে আমিই  কেন নয় ? ছোটবেলায় একবার ঈদের আগে যাকাত দেওয়ার জন্য আনা কাপড়ের মধ্যে থেকে কয়েকটি কাপড় ও কিছু টাকা চুরি করেছিল আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়েটি, সবাই তাকে শাস্তি দেবে বলে ঠিক করেছিল । হঠাৎ আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলি ওর নিশ্চয়ই খুব প্রয়োজন ছিল তাই এ কাজ করেছে  । পরে জানতে পারি ওই মেয়েটির বাড়িতে মা ও বোনের কোন নতুন কাপড় ছিল না তাই সে এই কাজটি করেছে । সেই থেকে আমার মূলত নারীদের জন্য কাজ করার ইচ্ছে শুরু । যেহেতু একটি রাজনৈতিক পরিবারে আমার বিয়ে হয় সেখানে মানুষের সেবা করার যে প্রচলন আমি দেখতে পাই, তা আমার এ ইচ্ছেকে আরো জাগ্রত করে । এরপর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমার পথচলা । বর্তমানে আমি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পিরোজপুর জেলা শাখার আমি সাধারন সম্পাদক হিসেবে রয়েছি । তাছাড়া শহর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্যান্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছি ।

টাইমটাচনিউজ : পিরোজপুর জেলার নারী জাগরনে ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সফল ?
সালমা রহমান :
দেখুন সফলতার কথা বলতে আমি সেভাবে তেমন কিছুই ভাবি নি । আমি একজন নারী আর নারী হয়ে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও তাদের জন্য কাজ করার আমার ব্রত হিসেবে নিয়েছি এবং এখন তাই করে চলেছি । দুঃস্থ নারীদের চিকিৎসা জন্য আর্থিক যতটুকু সাহায্য প্রদান করা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করছি । অসহায় নারীদের যেন নিজে নিজে অর্থ-উপর্জন করতে পারে সেজন্য সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছি, স্বামী পরিত্যাক্ত ও বিধবা নারীদের কারিগরি দক্ষতার জন্য তাদের বিউটি পার্লারের কাজ শিখিয়ে এবং পার্লার করে দিয়েছি । তাছাড়া আমার একটি হাতের তৈরী কাপড়ের দোকান রয়েছে যেখানে নারীরা কাজ করছে । গরীব মেয়েদের বই,খাতা কলম কিনে দিচ্ছি । চেষ্টা করছি নারীদের জন্য কিছু ভাল কাজ করার, সফলতা নিয়ে ভাবছি না ।

টাইমটাচনিউজ : নারী জাগরনের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করলে বাংলাদেশে নারী প্রতি বৈষম্যতা কমবে ?
সালমা রহমান :
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ প্রতিরোধে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন । এগুলো সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ সুনিশ্চিত হলেই পিরোজপুর সহ সারাদেশে নারী অধিকার খুব সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে ।

টাইমটাচনিউজ :  আপনার প্রত্যাশা কি ?
সালমা রহমান :
তাহলে কবিতার ভাষাই বলি, ‘সেদিন সুদূর নয়- যেদিন ধরনী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয় ’। পুরোপুরিভাবে যেদিন এই দিনটি আসবে সেদিন আমার জীবনের বড় আনন্দের দিন হবে । এটাই আমার প্রত্যাশা ও শেষ ইচ্ছে ।