Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাড়ছে ফিটনেছ বিহীন গাড়ি

ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধিসহ যানজটের আশংকা করছেন যাত্রীরা মানিকগঞ্জবিশেষ সংবাদ

ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধিসহ যানজটের আশংকা করছেন যাত্রীরা

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবাদে চলাচল করছে ফিটনেস বিহীন যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, অকালে ঝড়ে যাচ্ছে মানুষের প্রাণ, পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছে অনেকেই। এরপরও থেমে নেই অতি মুনাফালোভী বাস মালিকরা। এরা  ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহণ করে বাড়তি আয় করতে দীর্ঘ দিনের পুরানো অকেজো পড়ে থাকা বাসগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামাচ্ছে। ফলে ঈদের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফিটনেস বিহীন যানবানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বাস ঘন ঘন রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ায় ভোগান্তীতে পড়ছে যাত্রীরা। ফলে আসন্ন  ঈদুল ফিতরে এ মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের আশংকা করছেন যাত্রীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে। 

জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম রোড হচ্ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এ পথে নবীনগরের পর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, দুরপাল্লার কোচ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১০ হাজারের বেশী যানবাহন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচল করে থাকে। এছাড়া  ঢাকার গুলিস্থান ও গাবতলী থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত এবং মানিকগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে প্রতিদিন সাড়ে ৪ শতাধিক বাস চলাচল করছে। এসব বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিআরটিসি, যাত্রীসেবা, নবীন বরণ, পদ্মা লাইন, ভিলেজ লাইন, শুভযাত্রা পরিবহণ ইত্যাদি। এগুলোর অধিকাংশ অনেক দিনের পুরানো এবং চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া কিছু বাস মালিকরা ঈদকে সামনে রেখে দীর্ঘ দিনের পুরানো ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস যাত্রী পরিবহণের জন্য রাস্তায় নামাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এবং মানিকগঞ্জের অনেক ওয়ার্কশপগুলো উক্ত লক্কর-ঝক্কর মার্কা পুরানো বাসগুলো মেরামত ও রংকরণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঈদে ঘরমুখী যাত্রী বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফিটনেস বিহীন যানবাহনের সংখ্যা। প্রতিনিয়তই রাস্তার উপর বিকল হয়ে পড়ছে এসব ফিটনেস বিহীন বাস। আর ভোগান্তিতে পড়ছেন এসব বাসের যাত্রীরা।

শিবালয় উপজেলার রূপসা এলাকার মুদি দোকানদার আবজাল হোসেন জানান, সে সোমবার বিকেল ৩ টায় ঢাকার গুলিস্থান থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসার উদ্দেশ্যে বিআরটিসি বাসে ওঠে। বাসটি অর্ধেক রাস্তা আসার পর বিকল হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সে অন্য বাসে ওঠে গন্তব্যে পৌছায়। 

নবীন বরণ পরিবহণের যাত্রী পাবনার কেরামত আলী বলেন, সে গত সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে আরিচা আসার উদ্দেশ্যে বাসে উঠেন। বাসটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কালামপুর এলাকায় এসে বিকল হয়ে পড়ে। সে এক ঘন্টা অপেক্ষার পর অন্য বাসে উঠে আরিচায় পৌছায়। এতে এদিকে তার  সময় নষ্ট অপরদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, শুধু বিআরটিসি নবীন বরণ পরিবহণই নয় এমন দৃশ্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে। গাড়ির ফিটনেস না থাকার কারণে বড় বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। 
গত সোমবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় ফিটনেস সাদ পরিবহনের একটি বাসের দুর্ঘটনায় ৪ যাত্রী নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছে। 

চালকরা বলেন, গাড়ির মালিকরা ত্রæটিপূর্ণ অকেজো গাড়িগুলো কোন মতে মেরামত, রং চোং করে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই।   

গাড়ির গ্যরেজ মালিকরা বলেন, ঈদের আগে প্রতিবছরই পুরাতন গাড়ির মেরামত ও রংকরণ  কাজের ধুম পড়ে যায়। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

গাড়ির মালিক ও পরিবহণ নেতারা বলেন, গাড়ির ব্যবসায় সাড়া বছর তেমন লাভ হয়না। দুই ঈদ এবং পুজার সময় যাত্রীদের চাপ বাড়ে এসময় একটু বাড়তি আয়ের জন্য পুরাতন গাড়িগুলো ঠিক করে রাস্তায় নামানো হয়।

ঢাকা-আরিচা যাত্রীসেবা-পদ্মা লাইন মিনিবাস মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদ খান রুবেল জানান, গাড়ির জালানী এবং যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন গাড়ির ব্যবসায় বেশী লাভ হচ্ছে না। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস থাকলেও রোডে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ নানা ধরনের হয়রানি করতে থাকে। ফলে গাড়িগুলো কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চালানো ছাড়া কোন উপায় নেই। ঈদের তিন চার দিন আগে এবং পরে অন্য রোডে চলাচলকারী তিতাস, পলাশ ও নিরাপদ পরিবহণসহ গার্মেন্টেস’র রির্জাভ যাত্রী পরিবহণের লক্কর, ঝক্কর মার্কা বাস এ রোডে যোগ হয়। এসকল বাসই বেশী  দুর্ঘটান ঘটে।